এফিলিয়েট মার্কেটিং কি? এবং মার্কেটিং শুরু করার গাইডলাইন

মনে হয়না এফিলিয়েট মার্কেটিং নামটি শুনেনি এরকম মানুষ এখনও আছে। শুনেনি এরকম মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যারা অনলাইন থেকে ইনকামের আশা করেন তারা অবশ্যই অ্যাফিলিয়েট সম্পর্কে জানেন। বর্তমান সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি অনলাইন থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার উপায়। তবে আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা মাত্র এফিলিয়েট মার্কেটিং নামটা কোনো না কোনো সময় শুনেছেন। কিন্তু এসম্পর্কে জানেন না সঠিক তথ্য জানেন না।

তাই আজ আমি যারা জানেন এবং যারা জানেন না সবার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কাজ নিয়ে আলোচনা করছি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে জানার আগে আমাদের অনলাইন শপিং সম্পর্কে জানা উচিত:

বর্তমান সময়ে মানুষ অনলাইনে শপিং করতে পছন্দ করা শুরু করেছে। এটি মানুষের জীবনকে আরও বেশি সহজ করে দিচ্ছে। অনলাইন কেনাকাটার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন নতুন নতুন অনলাইন শপিং সাইটের জন্ম হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন শপিং সাইটগুলো অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবং প্রচুর পরিমাণে পণ্য বা সার্ভিস কেনা-বেচা হয়ে থাকে অনলাইনে।

মূলত পণ্যের কেনা বেচা করার জন্যই এতোগুলা সাইটের উৎপত্তি হচ্ছে। শুধুমাত্র এনালগ পণ্য নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবাও বিক্রি হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে। আশাকরি, আপনারা সকলেই সকল পণ্য বা সেবা বিক্রয়কারি অনলাইন শপিং সাইট গুলো সম্পর্কে জানেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে আমরা কি বুঝি?

সহজ কথায়, কোনো কোম্পানির পণ্যের প্রচারের জন্য নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে কোনো লিঙ্ক প্রোমোশনের কাজ করাকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। আমরা অনলাইন থেকে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করার আগে সেই পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রথমে আমরা গুগলে সার্চ করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই। আমরা যখন কোনো পণ্য সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করি। তখন যে রেজাল্টগুলো আসে সেখানে ভিজিট করলে আমরা পণ্যের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু আমরা এই সাইটগুলো থেকে সরাসরি পণ্য ক্রয় করতে পারিনা।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং শুরু করার গাইডলাইন
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং শুরু করার গাইডলাইন

সরাসরি পণ্য ক্রয় করতে না পারলেও আমরা পণ্যের সব তথ্য জানার পর এই পণ্য ক্রয় করার জন্য একটা “রেফারেল ক্রয়” লিংক পেয়ে থাকি। অথবা যে পণ্যের তথ্য আমরা জেনেছি সেই পণ্যটি ক্রয় করার জন্য একটা লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ পণ্যের আলোচনার শেষে যে লিঙ্কটি দেওয়া হয়, তাকে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক বলে। আর এটা ব্যবহার করে বা প্রমোশন করে অনলাইন থেকে আয় করাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে টাকা পাওয়া যায়?

এটি খুবই সহজ উত্তর। আপনি যখন কোনো কোম্পানির পণ্যের প্রচারের জন্য অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করেন। তখন আপনার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের পাঠক অনলাইন শপিং সাইটে ভিজিট করেন। ভিজিট করার পর ক্লায়েন্ট যদি ঐ পণ্যটি ক্রয় করে, তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়া হবে।

মনে করুন, আপনি বই নিয়ে আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেন। আমাজন প্রতিটি বইয়ের জন্য ১০% কমিশন দেয়। কেউ যদি আপনার লিঙ্ক ভিজিট করে একটা বই ক্রয় করে এবং বইটি থেকে যদি আমাজন $৩০ ডলার প্রফিট করে। এখন আপনি আমাজন থেকে ১০% কমিশন হিসেবে $৩০ ডলার থেকে $৩ ডলার কমিশন পাবেন।

এটা আমি সাধারণ একটা হিসাব দেখিয়েছি। এরকম $৩ ডলার করে আমি যদি মাসে ৩০টি বই বিক্রি করতে পারেন, তাহলে ৩০×৩=৯০ ডলার। এটাকে বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে হবে: ৯০×৮৫= ৭৬৫০ টাকা। এটা সত্যি যে, মাসে $৯০ আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করা একদম সহজ। কেননা, এখানে আমি মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর মতো কোনো কথা বলিনি।

পৃথিবীর যেকোনো কোম্পানির সাথে কি অ্যাফিলিয়েট পার্টনার হওয়া যাবে?

বিশ্বে অনেকগুলো অ্যাফিলিয়েট এসোসিয়েশন রয়েছে। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তে অবস্থান করেন কোনো সমস্যা নেই। আপনার পছন্দের যেকোনো অ্যাফিলিয়েট এসোসিয়েশনের সাথে আপনি কাজ করতে পারবেন।

এবার কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট এসোসিয়েশনের সাথে পরিচিত হওয়া যাক:

আমি একটু আগেই বলেছি পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কোম্পানি রয়েছে। যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু সবগুলো কোম্পানি জনপ্রিয় না। এজন্য অপরিচিত কোম্পানির পণ্য বা সেবা নিয়ে মার্কেটিং করলে সফলতা পাওয়া কঠিন। তাই আমি আপনাদের পরামর্শ দেব জনপ্রিয় কোম্পানির পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য।

জনপ্রিয় কিছু এসোসিয়েশন:
  • আমাজন
  • আলিবাবা
  • ফ্লিপকার্ট, ইত্যাদি।

এই ৩টি কোম্পানি সারা বিশ্বের সাথে পরিচিত। এদের লক্ষ লক্ষ প্রোডাক্ট আছে। আপনি দ্রুত সফলতা পেতে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করুন।

কিভাবে শুরু করব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং?

সহজ উত্তর। মাত্র ৪টি সহজ ধাপ অতিক্রম করে সফলভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ৪টি ধাপ সম্পর্কে:

০১. ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা:

বর্তমানে একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং প্যাকেজ ক্রয় করে ৩০ মিনিটের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে একটা প্রফেশনাল ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। নতুনরা ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেক কঠিন কাজ মনে করেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সত্যিই ৩০ মিনিটের মধ্যে একটা ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। আপনার যদি ওয়েবসাইট তৈরি করতে সমস্যা হয়। আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইট সেটআপ করে দেব।

আমাদের কল করার পর অবশ্যই “বিডিব্লগ” এর পরিচয় দিয়ে ফ্রি-তে করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করবেন। আমাদের মোবাইল: ০১৩১৬৫২০৩৮২

ওয়েবসাইট তৈরির জন্য কি কি প্রয়োজন হয়?

একটা ওয়েবসাইট তৈরি করতে ৩টি উপাদান অবশ্যই লাগবে:

  • ডোমেইন
  • হোস্টিং এবং
  • থিম।

আপনি থিম চাইলে ফ্রি-তে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু ডোমেইন এবং হোস্টিং আপনাকে অবশ্যই কোনো না কোনো কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। এবং আপনি যদি দূর্বল কোনো হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।এজন্য কখনও দূর্বল হোস্টিং প্ল্যান ব্যবহার করবেন না। দ্রুতগতির শক্তিশালী ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে একটা প্রিমিয়াম থিম ব্যবহার করবেন৷ ফ্রি থিমের কোডিংয়ে অনেক রকমের সমস্যা থাকে।

সেরা ৩টি ডোমেইন এবং হোস্টিং কোম্পানির ওয়েবসাইট লিঙ্ক নিচে দিয়ে দেওয়া হয়েছে:

আপনি যেকোনো ভালো মানের কোম্পানির সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমরা নতুনদের জন্য সেরা কিছু কোম্পানির তথ্য দিয়ে দিচ্ছি।

  • HostGator
  • BlueHost
  • Namecheap

উপরের ৩টি কোম্পানির সার্ভিস আপনি চোখ বন্ধ করে ক্রয় করতে পারেন। আমাদের জানা মতে এখনও এদের থেকে সেরা ডোমেইন ও হোস্টিং কোম্পানির সন্ধান আমাদের কাছে নেই।
যদি আপনি বাংলাদেশের কোম্পানির কাছ থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে চান, তাহলে আপনার “আইআইটি হোস্ট” এর সার্ভিস দেখতে পারেন।

আপনি বাংলাদেশ থেকে ইচ্ছে মতো যেকোনো কোম্পানির কাছ থেকে সেবা নিতে পারেন। তবে অবশ্যই HostGator, BlueHost, Namecheap থেকে সেবা নিতে চেষ্টা করবেন। এগুলো আপনাকে সহজে ওয়েবসাইট সেটআপ করতে এবং ম্যানেজ করতে সাহায্য করবে। এবং যেকোনো সময় আপনাকে সাপোর্ট দিবর।

০২. কন্টেন্ট আপলোড করুন:

কোয়ালিটি কন্টেন্ট আপনার ওয়েবসাইটের প্রাণ। আপনার সকল কাজের কাজের পুরস্কার পাবেন কন্টেন্টের উপর নির্ভর করে। আপনার সাইটে যদি কোয়ালিটি কন্টেন্ট আপলোড করতে না পারেন, তাহলে সেই সাইটের কোন মূল্য নেই। দক্ষ ব্লগাররা বলে থাকেন, “QUALITY CONTENT IS POWER OF BLOG SITE.”

সুতরাং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সফলতার আপনার প্রথম থেকে কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করতে মনোযোগ দিতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে দক্ষ কন্টেন্ট রাইটার্সদের মাধ্যমে এসইও ফ্রেন্ডলি এবং কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। আপনার যদি কন্টেন্ট রাইটার্সদের জন্য বিনিয়োগ করার সামর্থ না থাকে, তাহলে নিজেই চেষ্টা করুন। একটু মনোযোগ দিলে শক্তিশালী কন্টেন্ট আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন।

০৩. সেরা একটা এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হোন:

সেরা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বলতে সহজ এবং বিশ্বস্ত প্রোগ্রামে জয়েন করার কথা বলেছি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আবেদন করার আগে উক্ত কোম্পানির পলিসি এবং পেমেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন। আপনি যে পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার উপার্জিত কমিশনের টাকা হাতে নিতে পারবেন, সেই পেমেন্ট পদ্ধতি তাদের আছে কিনা জেনে নেওয়া অত্যেন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না শুধু আয় করতে থাকবেন, কিন্তু টাকা উঠাতে পারবেন না।

০৪. এসইও করুন (Search Engine Optimization):

এসইও হচ্ছে এক প্রকার মার্কেটিং বা প্রচারণা। আপনি আপনার সাইটে প্রকাশিত কন্টেন্ট গুলোর মার্কেটিং করার মাধ্যমে দ্রুত এবং বেশি কমিশন আয় করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটে যদি ট্রাফিক না আসে, তাহলে আপনি আয় করতে পারবেন না। এজন্য অবশ্যই এসইও নিয়ে কাজ করতে হবে।

এসইও করার জন্য আপনার অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন নেই। আপনি প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর পাবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে টাকা পাওয়া যায়?

মনে রাখবেন, সাইটে যতবেশি ভিজিটর পাবেন, ততো বেশি কমিশন আয় করার চান্স বৃদ্ধি পাবে। সাইটে দিনে ১ থেকে ২ হাজার ভিজিটর আসলে এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে থেকে আয় করার পাশাপাশি গুগল অ্যাডস থেকেও অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। যদি দৈনিক ১ থেকে ২ হাজার ভিজিটর আসে, তাহলে গুগল বিজ্ঞাপন থেকে মাসে $২০০ থেকে $৩০০ ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।

আজকের মতো সমাপ্তি বার্তা:

আশাকরি, আপনি আমার গাইডলাইন ভালো করে পড়েছেন। প্রয়োজনে লেখাটি আরেকবার পড়ুন। ইনশাআল্লাহ আপনি অনলাইনে সফল হবেন। যেকোনো বিষয়ে মতামত ও প্রিমিয়াম সাপোর্ট নিতে কল করুন: (+88) 01316520382

ধন্যবাদ।