The Alchemist -Paulo Coelho: বই থেকে শিখা ৮টি অমূল্য উপদেশ
The Alchemist বইটি থেকে শিখা ৮টি অমূল্য উপদেশ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। এই বইটির লেখক “Paulo Coelho” একজন ভেড়া পালন কারী তার ভেড়া বিক্রি করে কিভাবে গুপ্তধন খোঁজে পেল তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখান থেকে আপনি যে ৮টি শিক্ষা পাবেন তা আপনার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“Santiago” নামের একজন ভেড়া পালন কারী অনেকগুলো ভেড়া পালন করতেন। তিনি কিছু ঊল বিক্রি করতে শহর থেকে অনেক দূরে একজন ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। যেতে যেতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তিনি একটা পরিত্যক্ত গির্জায় অবস্থান নিলেন। এদিন তিনি অনেক খুশি ছিলেন। কারণ তিনি আর বেশকিছু দিন পরে ব্যবসায়ীর কাছে পৌছাতে পারবে। তবে তার খুশি হওয়ার আরো একটা কারণ ছিল। “Santiago” ঐ ব্যবসায়ীর মেয়ে দেখতে পাবে যাকে সে অনেকবেশি পছন্দ করেন। তিনি রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ করে স্বপ্ন দেখেন যে, মরক্কোর এক পিরামিডের নিচে অনেকগুলো গুপ্তধন রয়েছে। যা খনন করে “Santiago” কে এই গুপ্তধন সংগ্রহ করতে হবে।
Santiago বেশকিছু দিন ধরে এমন স্বপ্ন দেখে আসছে। বারবার এমন স্বপ্ন দেখার কারণে সে ঠিক করলো তার স্বপ্নের রহস্য খোঁজে বের করবে। পরে তার সাথে একজন রহস্যময় বৃদ্ধ লোকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। যিনি “King Of Salem” নামে পরিচয় দিয়েছিল। এই বৃদ্ধ লোকের পরামর্শ অনুযায়ী “Santiago” তার ভেড়ার দল বিক্রি করে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি গুপ্তধনের খোঁজে মরক্কোর উদ্দেশ্য বের হলেন।
বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলে “Santiago” একটা গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ শিখতে পারলেন। সেটা হলো “লোকে কি ভাববে সেটা কে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন।”
লোকটা তাকে বলেন আস্তে আস্তে মানুষ তার স্বপ্নের চেয়ে লোকে কি বলবে তা কে গুরুত্ব দিতে থাকে। যদি আপনার স্বপ্ন হয় একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার হওয়া কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ফটোগ্রাফির কাজ করলে লোকে কি ভাববে তা ভেবে আর এগোলেন না। যার ফলে আপনার স্বপ্ন নষ্ট করলেন। এমনটা করা যাবেনা। যেমন এখানে Santiago ব্যবসায়ীর মেয়ের প্রতি ভালোবাসা কে ভুলে গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে বের হলেন।
সুতরাং স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে কখনও অন্যদের ভাবনা নিয়ে চিন্তা করবেন না। – ‘The Alchemist’ (Paulo Coelho)
ফাইনালি “Santiago” মরক্কো পৌঁছে এবং সেখানে তার সাথে একজন ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। যে লোকটা পরে তার সমস্ত টাকা চুরি করে এবং “Santiago” অর্থ শূন্য হয়ে যায়। অথচ অন্য আরেকজন ব্যক্তি তাকে ঐ ব্যক্তির ব্যপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন, যা তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি।
এখানে থেকে তিনি তার দ্বিতীয় নম্বর শিক্ষা পান “নিজের চোখের রঙিন চশমাটা কে সরিয়ে দুনিয়াটা কে দেখতে শিখুন।”
ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সত্যি আমাদের আর কিছু করার থাকে না। ঠিক একইভাবে “Santiago” এরও কিছু করার ছিল না। তিনি ভেবেছিল ঐব্যক্তি সত্যি তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করছে। আমরা জীবনে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে শুরুতে তাড়াহুড়ো করে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যার মধ্যে একটা কমন ভুল হচ্ছে সবাইকে বিশ্বাস করা। ঠিক যেমনটি “Santiago” করেছে।
সব টাকা হারানোর পরে তিনি একটা কাঁচের দোকানে কাজ করতে শুরু করেন। কাঁচের দোকানে একবছর চাকরি করে তিনি আবার ভেড়া ক্রয় করার মতো টাকা জমা করে ফেলেন। কিন্তু এখন তিনি চিন্তা করছিলেন আবার ভেড়া ক্রয় করে পূর্বের মতো জীবনযাপন করবেন নাকি স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে যাবে! সে তার ভালোবাসার মানুষের কথা চিন্তা করে আবার স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে যান। পিরামিডের কাছে পৌছানোর পূর্বে মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার সময় তার সাথে অনেকের পরিচয় হয় তার মধ্যে ফাতিমা নামের একজন মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। যাকে “Santiago” ভালোবেসে ফেলে।
মরুভূমিতে চলার পথে তিনি আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পান। “সমস্ত কিছু মন দিয়ে লক্ষ্য করুন এবং নতুন কিছু শেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।” এটা ছিল তৃতীয় নাম্বার শিক্ষা। পথ চলার সময় তিনি চিন্তা করেন আমি ভেড়ার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি, কাঁচের কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি এবং এখন আমি চাইলে মরুভূমির কাছ থেকেও শিখতে পারি। অর্থাৎ আমরা চাইলে যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়, যেকোনো কিছুর কাছ থেকে শিখতে পারি।
হটাৎ তার সাথে এক উট চালকের সাথে পরিচয় হয়। উট চালক তাকে বলেন আমি আমার অতীত এবং ভবিষ্যৎ কোনটা নিয়ে বাঁচি না। আমি আমার বর্তমানে বাঁচি। যদি তুমি তোমার বর্তমারকে নিয়ে খুশি থাকতে পারো, তাহলে তুমি সবসময় খুশি থাকতে পারবে।
“বর্তমান মূহুর্তে বাঁচতে শিখুন। কারণ সবকিছু বর্তমানে ঘটে।” ‘The Alchemist’ (Paulo Coelho)
এটাই ছিল চতুর্থ নাম্বার শিক্ষা।
এবার তার সাথে একজন “Alchemist” এর সাথে যোগাযোগ হয়। যার বয়স ২০০ বছর এবং যিনি লিড কে গলিয়ে সোনায় পরিণত করতে পারেন। তার সাথে দেখা হওয়ার পরে তিনি ফাতিমা কে ছেড়ে আবার স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে যেতে কাজ করেন। “Alchemist” এর সাথে পথ চলার সময় তিনি শিখতে পারেন “কোনকিছু কে নিজের স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হতে দেওয়া উচিত না।” এটা ছিল পঞ্চম নম্বর শিক্ষা। সে যখন ফাতিমার কথা ভাবতে লাগলো, তখন “Alchemist” তাকে বলেন, সত্যি কারের ভালোবাসা কখনো কাউকে স্বপ্ন পূরণে বাঁধা দেয় না। যে ভালোবাসা স্বপ্ন পূরণে বাঁধা দেয় তা কখনও সত্যি কারের ভালোবাসা হতে পারে না।
অনেক্ক্ষণ পথ চলার পরে “Alchemist” কে “Santiago” প্রশ্ন করেন। কেন আপনি আমাকে কিছু শিখাচ্ছেন না? প্রশ্নের উত্তরে “Alchemist” বললো, শিখার সবচেয়ে বড় উপায় হলো কাজ করা। তুমি যা যা শিখার আছে সবকিছু ইতিমধ্যে শিখে গেছ। এখন তোমাকে কাজ করার মাধ্যমে তা ব্যবহার করতে হবে। এখানে সে ষষ্ঠ নম্বর শিক্ষাটি পেলেন “শিখতে হলে, করতে হবে। মানে বই পড়া ভালো, তবে প্রকৃত শিক্ষার জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে।”
এরইমধ্যে “Santiago” পিরামিডের কাছে পৌছে যায় এবং স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে ভেবে তার চোখে জল চলে আসে। তার চোখের জল যেখানে পড়ছে সেখানে সে খনন করছে গুপ্তধন খোঁজার জন্য। খনন করার সময় একদল ডাকাত তাকে ধরল এবং তার কাছে এক টুকরো সোনা পেল যা Alchemist তাকে দিয়ে ছিল। ডাকাতরা এক টোকরো সোনা পেয়ে ভাবল সে মাটির নিচে আরও সোনা লুকিয়ে রেখেছে। এটা ভেবে তাকে তারা মারতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে সে মার সহ্য করতে না পেরে গুপ্তধনের কথা তাদের বলে দিলেন। তাদের মধ্যে তখন একজন ডাকাত তার কানে কানে বললেন তিনিও এমন স্বপ্ন দেখেছেন। একটা পরিত্যক্ত গির্জায় সেই গুপ্তধন রয়েছে কিন্তু আমি তোমার মতো পাগল না যে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে এতো দূর পাথ পাড়ি দিয়ে গুপ্তধন খোঁজতে যাবো। এবলে ডাকাতরা তাকে পাগল ভেবে রেখে চলে গেলো।
ডাকাত দল তাকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার পরে Santiago গুপ্তধন খোঁজে পাওয়ার রহস্যের শেষ সমাধান বের করেন। তিনি বুঝতে পারেন গুপ্তধন মূলত ঐ গির্জার নিচে লুকানো আছে, যে পরিত্যক্ত গির্জায় সে আসার সময় ঘুমিয়ে ছিল। এবার সে গুপ্তধন সংগ্রহ করতে সেই গির্জায় ফিরে আসেন। এখন সে তার সপ্তম নম্বর শিক্ষা পেলেন, “প্রকৃত গুপ্তধন হচ্ছে শিক্ষা। প্রকৃত গুপ্তধন সেটা না, যেটা সে পরিত্যক্ত গির্জার মাটি খনন করে পেয়েছে।”
‘The Alchemist’ এ গুপ্তধন খোঁজতে গিয়ে তিনি বাস্তব জীবনে যা যা শিখতে পেরেছেন এসবকিছু ছিল তার জীবনের প্রকৃত গুপ্তধন।
১৯৮৮ সালে যখন তার নিজের দেশ ব্রাজিলে তার লেখা “The Alchemist (Paulo Coelho)” প্রকাশিত হয়, তখন এই বইটির কারো নজর কাড়তে পারেনি। প্রথম ছয় মাস বইটির মাত্র দুইটি কপি বিক্রি হয়েছিল। এই দু’টি কপিই একজন ক্রেতা ক্রয় করেছিলেন। একবছর পর প্রকাশক “Paulo Coelho” সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে দেন এবং Paulo Coelho দিশাহারা হয়ে পড়েন। কিন্তু “Paulo Coelho” বিশ্বাস রেখেন বইটি তার জীবনের বাস্তব চরিত্র। তিনি বলেন, আমি আমার লেখা গল্পের মতো করে নিজেই বাঁচতে চেষ্টা করছি। কারণ এই গল্পের মধ্যে আমি নিজেই ছিলাম।
তিনি বলেন, আমার গুপ্তধন ছিল আমার নিজের লেখা বই এবং আমার লেখার ক্ষমতা। যা আমি সবার সাথে ভাগ করতে চেষ্টা করছি। এখানেই খোঁজে পাওয়া গেল অষ্টম নম্বর শিক্ষা “নিজের জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে কখনও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।”
এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং বইটি সম্পূর্ণ পড়তে লিঙ্ক থেকে বইটি ক্রয় করতে পারেন।