বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ও অন্যান্য বিকাশ লেনদেন খরচ
বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ও অন্যান্য বিকাশ লেনদেন খরচ সম্পর্কে আমরা একটু পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রথমে আমরা বিকাশ সম্পর্কে একটু সাধারণ আলোচনা করি। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের প্রথম উদ্ভাবন কিন্তু বিকাশ নয়। বিকাশ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলো প্রথমে ডিজিটাল পেমেন্টের সূচনা করেন। আমরা যদি জনপ্রিয় কিছু আন্তর্জাতিক ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে প্রথম দিকে যেসকল কোম্পানির নাম থাকবে। যেমন Paypal, Payoneer, Paytm ইত্যাদি।
এই সকল অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি থেকে আইডিয়া নিয়ে বাংলাদেশেও শুরু হয় বিকাশের যাত্রা। প্রথম দিকে বিকাশ কে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পরিচিতির জন্য। কারণ তখনও বাংলাদেশের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার ছিলো না। যারা ফ্রিল্যান্সিং ও অনলাইনে কাজ করে ইনকাম করেন। তাদের কিছুটা অনলাইন পেমেন্ট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পূর্বে থেকে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও অনেক কম মানুষ রয়েছে যারা অনলাইনে কাজ করেন। এজন্যই মূলত বিকাশ কে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। হাতে হাতে ধরে বাংলাদেশের মানুষকে শিখাতে হয়েছে বিকাশের ব্যবহার।
বর্তমানে বিকাশ ছাড়া আরও অনেকগুলো ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। যদিও এখনও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিকাশের মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এতো প্রচারণার পরেও বিকাশের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ও অন্যান্য বিকাশ লেনদেন খরচ সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত। এজন্য আমাদের আজকের লেখাটি লিখতে চেষ্টা করছি।
লেনদেনের প্রকার ও বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ :
খরচ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের লেনদেনের প্রকার সম্পর্কে জানা উচিত। আমরা জানারা বিকাশ ব্যবহার করি সবাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের মাধ্যমে ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করি। কিন্তু সবগুলো লেনদেন সম্পর্কে আমরা ভালো জানি না। এমনকি আমাদের অজানা থাকার সুযোগ নিয়ে অনেকে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে ফেলেন। যদি আপনি আজকে সব প্রকারের লেনদেন সম্পর্কে জেনে নেন, তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে কেউ এসব বিষয়ে ঠকাতে পারবে না।
টাকা লেনদেনর প্রকারভেদ:
- ক্যাশ আউট
- সেন্ড মানি
- ক্যাশ ইন
- পেমেন্ট
- গিফট
- মোবাইল রিচার্জ
- পে বিল
- টিকেট
- ট্রান্সফার মানি, ইত্যাদি।
বিকাশের আরও বিভিন্ন প্রকারের লেনদেন সুবিধা রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদ্ধতি যুক্ত করে যাচ্ছে। যেন ব্যবহারকারীরা এখান থেকে ভালো সুবিধা ভোগ করতে পারেন এবং পাশাপাশি তারা যেন ভালো ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারেন। বিকাশের এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিমাণ চার্জ কাটা হয়। কোন লেনদেনে কিরকম চার্জ কাটা হয়? এবিষয়ে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করবো।
বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ :
সবচেয়ে বেশি টাকা চার্জ করা হয় ক্যাশ আউট করার জন্য। যখন থেকে বিকাশ তাদের ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস দিয়ে আসছে, তখন থেকে ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ টাকা চার্জ করা হয়। এটা আসলেই ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক বেশি কষ্টের। তাও সেবা গ্রহণ করার জন্য বিকাশ সবার কাছে প্রিয়। বর্তমানে মোবাইল থেকে কোড ডায়াল করে ক্যাশ আউট করলে প্রতি 1000 টাকার লেনদেনে 18.500000000000004 কাটা হয়। তবে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করলে সবসময় বিশেষ অফার পাওয়া যায়। বর্তমানে বিকাশ অ্যাপ দিয়ে ক্যাশ আউট চার্জ প্রতি হাজারে 17.5 টাকা।
অ্যাপ দিয়ে লেনদেন করা সবচেয়ে সুরক্ষিত ও সবচেয়ে খরচ কম। তাই সবসময় বিকাশ অ্যাপ দিয়ে লেনদেন করুন। অ্যাপ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করলে প্রথমবার রয়েছে ১০০ টাকার বেশি বোনাস। অন্যান্য বোনাস সুবিধা তো সবসময় রয়েছে। এখান থেকে বিকাশ অ্যাপটি ইনস্টল করুন।
নতুন একাউন্ট তৈরি করুন:
যাদের বিকাশ একাউন্ট নেই। আপনারা কোনো রকম খরচ ছাড়া বিকাশ একাউন্ট তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে সম্পূর্ণ ফ্রি-তে নতুন একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করার সুবিধা রয়েছে। তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ চাইলে পরবর্তীতে একাউন্ট তৈরির চার্জ করতে পারে। কিভাবে নতুন বিকাশ একাউন্ট তৈরি করবেন? তা জানার জন্য নিচের লেখাটিতে ক্লিক করুন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও bKash সম্পর্কিত সকল তথ্য
bKash ক্যাশ ইন চার্জ | ক্যাশ ইন করুন সম্পূর্ণ ফ্রি-তে:
আপনার বিকাশ একাউন্টে টাকা রিচার্জ করলে কোনো টাকা কাটা হবেনা। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি!!! এমনকি আপনার পরিচিত কোনো ব্যক্তির মোবাইলে ক্যাশ ইন করলেও কোনো খরচ নেই। তবে আপনি চাইলে নিজ থেকে ক্যাশ আউট করার খরচ দিয়ে দিতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে।
সেন্ড মানি খরচ:
পার্সোনাল একাউন্ট থেকে অন্য পার্সোনাল একাউন্টে লেনদেন করাকে সেন্ড মানি বলা হয়। এক্ষেত্রে *২৪৭# ডায়াল করে টাকা পাঠালে প্রতিবার লেনদেনের সময় ৫ টাকা চার্জ করা হয়। তবে ৫টি প্রিয় নাম্বারে লেনদেন করলে সেন্ড মানি খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি। *২৪৭# ডায়াল করে পছন্দের নাম্বার প্রিয় নাম্বারে যুক্ত করতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপ থেকে প্রিয় নাম্বার যুক্ত করা সবচেয়ে সহজ।
প্রতি মাসে আপনার সিলেক্ট করা প্রিয় নাম্বার ছাড়া অন্য যেকোনো পার্সোনাল নাম্বারে ০.০১ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সেন্ড মানি’র ক্ষেত্রে কোনো টাকা কাটা হবে না। প্রতি মাসে আপনার নির্বাচিত প্রিয় নাম্বার ছাড়া অন্য যেকোনো পার্সোনাল নাম্বারে ১৫,০০০.০১ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সেন্ড মানি’র ক্ষেত্রে প্রতিবার লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ টাকা করে টাকা হবে। প্রতি মাসে প্রিয় লিস্টে যুক্ত করা নাম্বার ছাড়া অন্য যেকোনো নাম্বারে ২৫,০০০ টাকার বেশি টাকা সেন্ড মানি’র ক্ষেত্রে প্রতিবার আপনার একাউন্ট থেকে ১০ টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে।
বিকাশ এটিএম ক্যাশ আউট চার্জ :
আপনি চাইলে এখন প্রচলিত এটিএম বুথ থেকে বিকাশের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এটিএম বুথ থেকে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা হলে উত্তোলন করা যায়। ২০০০ টাকার কম হলে এটিএম ব্যবহার করা যাবেনা। এক্ষেত্রে ATM থেকে ২০০০ টাকা ২৫০০০ টাকা উত্তোলন করতে প্রতি ২ হাজারে ২৯.৮ টাকা করে চার্জ কাটা হবে।
কোনো জরুরি মূহুর্তে আমাদের ATM ব্যবহার করা উচিত। অযথা এটিএম ব্যবহার করলে অনেক টাকা নষ্ট হবে। যাদের কোনো তাড়াহুড়ো থাকবেনা আপনারা সবসময় এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে চেষ্টা করবেন। তাও আবার বিকাশ অ্যাপ দিয়ে। কারণ অ্যাপ দিয়ে লেনদেন সুরক্ষিত ও কম ব্যয়বহুল।
মার্সেন্ট পেমেন্ট:
শপিংমল বা অনলাইন কেনাকাটা করার পরে বিকাশ পেমেন্ট করলে কোনো অতিরিক্ত খরচ নেই। বরং অনেক সময় বিকাশ পেমেন্ট করলে ক্যাশ ব্যাক অফার পাওয়া যায়। তবে সবসময় যেকোনো অফারের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করবেন। মার্সেন্ট পেমেন্ট অনলাইন ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা কে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো।
বিকাশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা লেনদেন খরচ:
এটি আসলে একসময় আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। আমরা যে একসময় বিকাশের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারবো। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। আশাকরি আর বেশি দেরি নাই। অল্প সময়ের মধ্যে সকল ব্যাংকের সাথে বিকাশ থেকে লেনাদেনা করা যাবে।
তবে বিকাশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা লেনদেনের খরচটা আমার বেশি মনে হয়েছে। আপনারা যদি বেশি টাকা লেনদেন করেন এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজে ব্যাংকে গিয়ে সেবা গ্রহণ করুন। জরুরি মূহুর্তে যদি বিকাশের সেবা ব্যবহার করতে চান, এক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার টাকা লেনদেনের জন্য ২০ টাকা করে চার্জ কাটা হবে।
কার্ড থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার এবং ক্রেডিট কার্ড বিল ইত্যাদি বিষয়ে পরবর্তী বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা হবে। এবিষয়ে যদি দ্রুত জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আপনাদের সাড়া পেলে আমরা দ্রুত এই পোস্টে অন্যান্য সকল বিকাশের চার্জ সম্পর্কে জানাবো।
অন্যান্য বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ –
মোবাইল রিচার্জের জন্য কোনো ফি কাটা হয় না। আপনার মোবাইলে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ইচ্ছে মতো রিচার্জ করতে পারবেন। তবে ডোনেশন ও পে বিলের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা চার্জ হিসেবে টাকা হবে। আপনারা যদি প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী সকল বিলের খরচ জানতে চান, তাহলে নিচের ছবিতে ভালো করে যাচাই করুন। ছবিতে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা হয়েছে।
বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ক্যালকুলেটর :
ব্যবহারকারীদের জন্য বিকাশ সবসময় ভিন্ন কিছু করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের ক্রেতারা যেন সবকিছু সহজে পরিচালনা করতে পারেন তার জন্য নিয়ে এসেছিল অসাধারণ ডিজাইন করা বিকাশ অ্যাপ। এটি সত্যি খুবই সহজ ও ইউজার ফ্রেন্ডলি। তবে অ্যাপ ছাড়াও তারা বর্তমানে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকমের টুলস যুক্ত করা শুরু করেছে।
এদের কোম্পানি সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে একমাত্র সোর্স। এখন আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে সকল প্রকারের বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ক্যালকুলেট করতে পারবেন। বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ক্যালকুলেটর ব্যবহারে এটি সহজে করা যায়। ক্যাশ আউট চার্জ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে এখানে ক্লিক করুন।
বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ –
প্রিয় পাঠক, আমরা সবসময় আপনাদের সাপোর্ট চাই। আপনারা সবসময় আমাদের সাথে আছেন বলে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ সম্পর্কে আমরা যথাযথ তথ্যবহুল আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। এরপরও অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বাকি রয়েছে গেছে। আপনাদের মনে থাকা যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য প্রশ্নটি লিখে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ!