কিভাবে মার্কেটিং গোল তৈরি করবেন?
1 min read

কিভাবে মার্কেটিং গোল তৈরি করবেন?

মার্কেটিংয়ের প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনার একটা গোল তৈরি করা প্রয়োজন। ফেসবুকে প্রতিদিন অনেকগুলো পোস্ট করবো। পণ্য বিক্রি করে হাজার হাজার কামাই করবো। এমন চিন্তা ভাবনাটা মোটেই খারাপ না। তবে সবকিছুর একটা লিমিটেশন ও নিয়ম থাকে। এজন্যই আপনাকে মার্কেটিং গোল তৈরি করতে হবে।

যদি আপনি একটা সঠিক গোল তৈরি করতে সক্ষম হোন, তাহলে আপনি Brand awareness বৃদ্ধি করতে পারবেন, ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন, আপনার টার্গেটেড ক্রেতাদের লিড সংগ্রহ, Engagements এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন।

কিভাবে মার্কেটিং গোল তৈরি করবেন?

এটার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সূত্র নেই। এটার পরিপূর্ণ স্বাধীনতা আপনার হাতে রয়েছে। এখানে আপনাকে ঠিক করতে হবে। ঠিক আপনি কতটুকু অর্জন করতে চান? এবং এই অর্জনের জন্য আপনি কতটুকু এনার্জায়েস্ট হয়ে আছেন।

“মার্কেটিং করতে কৌশল প্রয়োজন, এনার্জির প্রয়োজন নেই।” এমন কথা পরিপূর্ণ মিথ্যা। এই সেক্টরে আপনাকে সফলতা পেতে ভালো ধর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা রাখতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এনার্জি খরচ করতে হবে।

এনার্জির খবচ কত প্রকার হতে পারে?

এবিষয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রীরা ভালো জানবে। তবে আমি এটা বলতে পারি যে, মানুষের ভিতরে জমানো এনার্জির খরচ দুভাবে হয়ে থাকে।

শারিরীকভাবে

মানুষিকভাবে

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য আপনাকে মানুষিক এনার্জির বিশেষ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে যদিও কিছুটা শারীরিক এনার্জির অপচয় হবে। এখানে আপনার মানুষিক এনার্জির যত সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন, ততই ভালো সফলতা অর্জন করতে পারবেন। মানে আপনার তৈরি করা গোল পূর্ণ করতে পারবেন।

মার্কেটিং গোল কেমন হওয়া উচিত?

শারিরীক এনার্জি নষ্ট করে আদিম যুগের মার্কেটিং পদ্ধতির বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে। বর্তমানে সবাই স্মার্টভাবে চিন্তা করে৷ সবাই যখন স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনি কেন এনালগ পদ্ধতিতে চিন্তা করবেন! সুতরাং বুঝতে পারছেন আমাদের মার্কেটিং গোল স্মার্ট হওয়া উচিত।

চলুন একটা “SMART” মার্কেটিং গোল তৈরি করার কৌশল জেনে নিই:

SMART শব্দটা কে আমরা যদি একটু বিশ্লেষণ করে দেখি, তাহলে আমরা স্মার্ট একটা গোল তৈরি করতে পারবো।

S = Specific: নির্দিষ্ট একটা গোল তৈরি করুন:

ধরুন, আপনার বিজনেস এগিয়ে নিতে আপনাকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন করতে হবে। এখন আপনি একটা গোল তৈরি করলেন, প্রতিদিন বেশি সময় দিয়ে কাজ করবেন, আগের থেকে বেশি মনোযোগী হবেন, রাত জেগেও কাজ করার অভ্যাস করবেন, ইত্যাদি। ঠিক এমন গোলটা কিন্তু বড়োই গোলমেলে ও হাস্যকর হয়ে গেলো। এটা কে আসলে বিজনেস গোল বলা পুরোপুরি অন্যায় হয়ে যাবে।

নির্দিষ্ট মার্কেটিং গোল
নির্দিষ্ট মার্কেটিং গোল

এখানে নির্দিষ্ট গোল তৈরি বলতে এটার একটা পরিমাণ ঠিক করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আপনি যদি নির্দিষ্ট না করে সামনে এগোতে থাকেন, তাহলে আপনি কেন সামনে পা এগিয়ে নিচ্ছেন তাও বুঝতে পারবেন না। এমন হলে হঠাৎ কোনো এক জায়গায় ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিবেন৷ যদি আপনি এমনটা ঠিক করেন যে, সামনে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটবেন এবং এই পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যতগুলো কাগজ রয়েছে সবগুলো কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে আসবেন।

ঠিক এমন একটা নির্দিষ্ট গোল আপনাকে ক্লান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে এবং আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সহজে অর্জন করতে সাহায্য করবে। এজন্য আপনার বিজনেসের মার্কেটিং গোল হওয়া উচিত, আগামী ৩ মাসের মধ্যে কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করবেন এবং কতগুলো পণ্য আপনি বিক্রয় করবেন? কিভাবে মার্কেটিং করবেন? কত শতাংশ মুনাফা আনতে হবে? আপনার নির্দিষ্ট মুনাফা অর্জনের জন্য কতগুলো সফল ক্রেতা আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে? ইত্যাদি।

M = Measurable: পরিমাপযোগ্য –

আমরা যখন নির্দিষ্ট গোল সেট করার কথা বলছিলাম, তখন নির্দিষ্ট একটা লিমিট ধরে দিয়ে গোল তৈরি করেছি। প্রয়োজনে উপরের ধাপটি আবার পড়ুন। ধরুন, আপনি আজকে আদা রসুন বিক্রি করবেন মাথায় করে। একটা বড় গুদাম থেকে ইচ্ছে মতো আদা রসুন নিয়ে হাটতে আছেন৷ এক্ষেত্রে আপনি শুধু সামনে এগোতে থাকলেন। একসময় গিয়ে আপনি নিজের পদ হারিয়ে ফেললেন।

এখন কি করা উচিত! আসলে এই সময় আপনার আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। কারণ, আপনি পরিমাপযোগ্য গোল তৈরি করতে সক্ষম হননি। আপনাকে জানতে হবে পাঁচ কিলোমিটার সমান কত দূরত্ব? যেহেতু আপনি নির্দিষ্ট করেছেন, সেহেতু সেই নির্দিষ্ট অংশটাকেও আপনাকে পরিমাপ করতে হবে। শুধু সামনে এগোতে থাকলে হবে না।

পরিমাপযোগ্য মার্কেটিং গোল
পরিমাপযোগ্য মার্কেটিং গোল

এজন্য আপনার গোলটা হওয়া উচিত ঠিক এমন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে কত শতাংশ বিনিয়োগ করবেন? এবং এখান থেকে কত শতাংশ মুনাফা অর্জন করবেন? কথাগুলো গল্পের মতো করে বলতে গিয়ে হয়তো একটু জটিল মনে হচ্ছে। তবে যারা গল্প পড়তে ভালোবাসে তাদের জন্য সমস্যা নেই। এখানে S ও M এর কাজ একই মনে হতে পারে। আসলে এদের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে।

S দিয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের অংশ নির্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে M দিয়ে সেই অংশ কে পরিমাপযোগ্য কিনা তা পরিক্ষা করতে বলা হয়েছে। সহজ কথায়, পাঁচ কিলোমিটার হাঁটবেন কিন্তু পাঁচ কিলোমিটার সামান কত দূরত্ব তা আপনি জানেন না। তাহলে কি হবে বলেন? আশাকরি, S, M বুঝতে পারছেন।

A = Attainable: অর্জনযোগ্য –

ঘুরে ফিরে আমি একই কথা বার বার বলে বুঝাতে চেষ্টা করছি৷ ইতিমধ্যে আমরা যে S দিয়ে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ বা কাজের গোল সেট করেছি এবং M দিয়ে আমাদের সিলেট করার নির্দিষ্ট কাজের লক্ষটি পরিমাপ যোগ্য কিনা তা আমরা যাচাই করেছি। এখন চিন্তা করতে হবে এটা অর্জনযোগ্য কি-না।

আরও সহজে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। মনে করুণ, আপনি আকাশ থেকে একটা তারকা নিয়ে আসবেন। এটা হচ্ছে S। কি নিয়ে আসবেন? আকাশ থেকে তারকা। এরপর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব কতটা তা পরিমাপ করলেন। তাহলে আপনি কি নিয়ে আসতে যাবেন তা জানেন এবং কত দূরত্ব আপনাকে অতিক্রম করতে হবে তা আপনি জানেন। কিন্তু আজও কি সম্ভব আকাশ থেকে একটা তারকা বহন করে পৃথিবীতে নিয়ে আসা?

অর্জনযোগ্য মার্কেটিং গোল
অর্জনযোগ্য মার্কেটিং গোল

এটা নির্ণয় করা হচ্ছে অর্জনযোগ্য। যখন আপনি কোনো গোল তৈরি করতে যাবেন, তখন আপনাকে এটা চিন্তা করতে হবে এটা সত্যি আপনার দ্বারা সম্ভব কি-না। মানে এটি আপনি করতে পারবেন কি-না। আমাদের বাংলাদেশের ৯৫% উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখেন ঠিকই। কিন্তু তা অর্জনযোগ্য কি-না তা নিয়ে চিন্তা করে না। ফলে আবেগের তাড়নায় মাঝপথে এসে আম ও ছালা দুটোই হারায়।

R = Realistic: বাস্তববাদী –

আমরা যখন সাধারণত বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের কোনো সদস্যদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি। তখন অনেক সময় বন্ধু বা পরিবারের বড়জন কেউ হঠাৎ এমন একটা শব্দের ব্যবহার করে।

“বাস্তববাদী কথা বল। ভিত্তিহীন কিছু বলবে না।”

ঠিক এটাই হচ্ছে Realistic। ভাবুন আপনি বিজনেস করবেন এবং এটা দিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করবেন। অথচ আপনার প্ল্যানটা হচ্ছে অবাস্তব। তখন বিষয়টা কতটুকু হাস্যকর হবে?

S ও M এর মতো A ও R কেও আপনাদের এক মনে হতে পারে। ভালো করে মনোযোগ দিয়ে এগুলো বুঝতে হবে। এদের মধ্যে ঠিক আগের মতো আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে। এখানে A দিয়ে আপনার গোলটা অর্জন করতে পারবেন কি-না তা ঠিক করতে বলা হয়েছে। অপর দিকে R দিয়ে আপনার গোলটা বাস্তব নাকি অবাস্তব তা যাচাই করার কথা বলা হয়েছে।

মনে করুন, আমি বললাম আকাশের ওপারে দুটি বড় বড় সর্ণের পাহাড় আছে। এখন এগুলো সংগ্রহ করতে যাওয়া লাগবে। ভাবুন আপনি আমার সাথে যাচ্ছেন। কিন্তু আজও এটার কতটা বাস্তব ও ভিত্তি রয়েছে তা কে জানে? এজন্যই আমাদের বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

T = Timely: সময় মতো –

বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন তা ঠিক আছে। এখন কি বসে থাকবেন? না। একদম বসে থাকা যাবে না। উপরের যতগুলো ধাপ আপনি পূর্ণ করে আসছেন তা নিয়ে মাঠে নামার সময় এখন।

আপনি যদি উপরের সংজ্ঞা গুলো সহজে বুঝতে পারেন, তাহলে একটা স্মার্ট গোল তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এমনকি আপনি সফলদের মতো স্মার্ট গোল তৈরি করতে পারবেন। তো আজকে এতোটুকুই থাকলো। আপনারা আমাদের বিডি ব্লগের সাথে থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটকে সাপোর্ট করুন। আমাদের লেখাগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আমাদের সাপোর্ট করলেই আমরা আপনাদেরকে ভালো কিছু  উপহার দেওয়ার জন্য সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *