বাড়ি নির্মানে ঋণ পাওয়ার খুব সহজ কিছু উপায় । আপনি কি একটা ছোট ফ্ল্যাট অথবা একটা ছিমছাম বড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখছেন?
যাদের এক টুকরো জমি আছে, ছোট্ট একটা ছিমছাম অথবা বড় পরসরে নিজেদের জন্য কোন বাড়ি বা গৃহ নির্মাণ করতে চান তাদের স্বপ্ন থাকে বিশাল।
কিন্ত নিজের তৈরি একটা বাড়ীর স্বপ্নে বিভোর এইসব মানুষের প্রথম বাধা হয়ে সামনে আসে বাড়ী তৈরীর জন্য পর্যাপ্ত টাকা।
স্বপ্ন বিলাসী এসব মানুষের সহায়তায় তাই এগিয় এসেছ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি খাত।
দিচ্ছে খুব কম সুদে হোম লোন ।
ঢাকায় কম খরচে বাড়ি নির্মাণ যদিও অনেক বেশি কষ্টসাধ্য কিন্তু ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় বাড়ি নির্মাণের খরচ ঢাকা থেকে তুলনামুলক কম।
ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে চান, অথবা একটা নিজের বাড়ি!যদি আপনার ইচ্ছা থাকে ব্যাংক লোন নেয়ার-আজকের আর্টিকেল টি আমরা আপনার জন্যই লিখছি।
ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি নির্মানে ঋণ পাওয়ার খুব সহজ কিছু উপায় এবং
স্থান নিয়ে আমরা বিশদ আলোচনা করবো আমরা আজকের নিবন্ধনে-
তো চলুন শুরু করা যাক-
বাড়ি বানানোর জন্য লোন পাবেন কোথায়?
সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে এফোর্ডেবল হোম লোন অথবা গৃহলোন কারা দিতে প্রস্তুত আপনাকে। এখানে এফোর্ডেবল বলতে, সুদের অঙ্ক কম, ইফেক্টিভ লোন টার্ম
( মানে আপনাকে কত বছর লোনটা চালাতে হবে এটা পরিশোধ করার জন্য) এবং লোন প্রিমিয়াম বুঝানো হয়েছে।
আবাসন খাতে খুব সহজ শর্তে বাড়ির লোন দেয়ার তালিকায় প্রথম স্থান হচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।
আমরা যাকে এক কথায় বিএইচবিএফসি নামে চিনি।
অন্যান্য সরকারি ব্যাংক গুলো ও বাড়ি বানানোর জন্য লোন দেয়।
তবে বিএইচবিএফসি একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান যেটা আবাসন লোন দেয়ার জন্য কাজ করে থাকে।
আর বেসরকারী ব্যাংকের কথা যদি বলি- অপশনের অভাব নেই!
বাংলাদেশে প্রতিটা টপ ক্লাস প্রাইভেট ব্যাংক ই মুখিয়ে থাকে গ্রাহকদের যে কোন ধরনের লোন দেয়ার জন্য। এবার সেটা হোম লোন হোক অথবা অন্য লোন।
সমস্যা একটাই,প্রাইভেট ব্যাংক গুলো বাড়ির লোন দেয় কড়া সুদে, যা গ্রাহকের জন্য সবসময় ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
বিএইচএফসি, সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান গৃহ লোন দিচ্ছে, তাদের লিস্ট টা একনজরে দেখে নিই চলেন-
- ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং
- ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট
- লংকাবাংলা ফিন্যান্স
- আইডিএলসি
- আইপিডিসি
কত টাকা গৃহ লোন পাবেন আপনি?
আপনার বাড়ি বানানোর জন্য লোন আপনি যেখান থেকেই নেন না কেন,
সর্বপ্রথম আপনার জানতে হবে বাড়ি নির্মানে ঋণ পাওয়ার খুব সহজ উপায়গুলো কি কি ? আপনি যেখান থাকে লোন নিতে চাচ্ছেন তারা আপনাকে শতকরা কত টাকা হারে সুদ ধরবে।
যদিও এই সুদের অঙ্ক টা এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য লম্বা সময় ধরে চেষ্টা চলছে কিন্তু সত্যি কথা হলো এই সুদ এখনো দুই অংকের নিচে নামে নাই বললেই চলে৷
এছাড়াও আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠান ই আপনাকে আপনার ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি বানানোর পুরো টাকা টা দিবে না।
অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকার যোগান আপনার নিজেরই দিতে হবে।
বিএইচ বিএফসির মত সরকারি আবাসন লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও আপনাকে ৭০% থেকে ৮০% টাকা দিবে।
যাই হোক একেবারে পার্ফেক্ট এমাউন্ট যদি জানতে চান, বিএইচবিএফসি আপনাকে দিবে ১ কোটি ২০ লাখ পর্যন্ত লোন ( একক লোন হিসেবে)।
যদিও আপডট নিউজ হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয় এই এমাউন্ট বাড়িয়ে ২ কোটি পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে।
কিন্তু আপনাকে আরো একটা জিনিস মনে রাখতে হবে বিএইচবিএফসি-র লোন শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এড়িয়ার জন্য সীমাবদ্ধ।
খুশীর ব্যাপার হলো, আপনি যদি হোম রিনোভেশন, মানে আবাসন মেরামতের জন্য এপ্লাই করেন,
সরকারি এই সংস্থাটি আপনাকে লোন দিবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এ পর্যন্ত আমরা যত সরকারি বেসরকারি হোম লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এর কথা বলেছি,
সবাই আপনাকে হোম লোন দিবে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত।
তবে সরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক হোম লোন অফার করছে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘সোনালী নীড়’ নামক প্রকল্পের আওতায়।
এছাড়া আইএফাইসি হোম লোন দিচ্ছে ২ কোটি টাকা ‘আমার বাড়ি ‘ প্রকল্পের আওতায়।
কিন্তু সেমিপাকা ভবন যদি বানাতে চান, আইএফআইসি থেকে লোন পাবেন সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কে কত পার্সেন্ট সুদ নিচ্ছে?
আশার ব্যাপার হলো বিএইচবিএফসি খুব সরল হরে মাত্র ৯ শতাংশ হারে গৃহলোন অফার করছে একক অথবা বাণিজ্যিক ভাবে।
অন্যান্য সরকারী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো সবাই চক্রবৃদ্ধি হারে হোম লোনের সুদ ধার্য্য করে থাকে।
এদিক দিয়ে সরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ও এগিয়ে আছে, ৭% হারে হোম লোন দিচ্ছে গ্রামে বাড়ি নির্মানে।
বেসরকারি ব্যাংক গুলো হোমলোন দিচ্ছে চড়া সুদে, অলমোস্ট ১০% থেকে ১৫% পর্যন্ত।
যদিও অন্যান্য প্রাইভেট আর্থিক সুবিধা প্রদান কারী প্রতিষ্ঠান গুলো আবার ৯% হারেও বাড়ির লোন দিচ্ছে,
তবে গ্রাহকের স্মার্ট ডিসিশন হলো সমস্ত পসিবল লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এর সাথে কথা বলে লোন এর এমাউন্ট, সুদ ইত্যাদি তুলনা করে বেস্ট অপশন বেছে নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি-সরকারি বেসরকারি খাত থেকে
হোম লোন পাওয়া যায় মোটামুটি ৯% থেকে ১৫% সুদ, এই রেঞ্জের সুদের বিনিময়ে।
এখন ব্যাক্তি বিশেষ এ অথবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সুদের হার কম বা বেশি হতে পারে।
বাড়ির লোনের জন্য কি ডকুমেন্টস লাগে?
বাড়ির লোন এর এমাউন্ট হয় বিশাল। আর এই বিশাল এমাউন্টের টাকা আপনি যখন আপনার একাউন্টে পাবেন, এর জন্য আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস দেখাতে হবে,
এপ্লাই করতে হবে প্রতিষ্ঠান বরাবর এবং আরো অন্যান্য ইমপর্ট্যান্ট ফরমালিটিজ ও পাশাপাশি আছেই
বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অথবা বিএইচবিএফসি থেকে এই লোন পেতে হলে মেলা কাগজপত্র সাবিমিট করতে হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো অত কাগজপত্র চায়না, উপরন্তু আপনি যদি বাড়ি করার পরিবর্তে ফ্ল্যাট বানান-এরা আপনাকে আরো কম প্যারা দিবে কাগজপত্র সাবমিট করার ব্যাপারে।
তো, বাড়ি নির্মানে আপনার যা যা ডকুমেন্টস লাগবে-
- আপনার বাড়ির নকশার সত্যায়িত ফটোকপি। নকশাটি অবশ্যই প্রপার অথোরিটির কাছ থেকে এপ্রুভ করাতে হবে।
- নামজারি খতিয়ান।
- মুল দলিল।
- বাড়ির খাজনা আদায় করেছেন সেই রশিদের ফটোকপি (অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে)।
- সিএস, এস এ, আর এস, বি এস খতিয়ানের ফটোকপি (সত্যায়িত)
- এন ইসি ( ১২ বছরের তল্লাশি সহ, যোগাড় করতে হবে জেলা বা সাবরেজিস্টার এর কার্যালয় থেকে)
- জমির মুল বরাদ্ধপত্র এবং দখল হস্তান্তর পত্র ( যদি সরকারি ভুমি হয়ে থাকে)।
- আবেদনকারীর ইনকামের প্রমাণ পত্র। যদি আয়ের উৎস বাবা মা/ স্বামী স্ত্রী / ছেলেমেয়ে হয় তাহলে আয়ের ও যথাযথ প্রমাণ পত্র দাখিল করতে হবে।
- তিন হাজার টাকা আবদন ফি জমা দিয়েছন সেটার প্রমাণ রশীদ।
- আবেদনকারীর ছবি।
- আয়কর প্রত্যায়ন পত্র (যদি আয়কর দিতে হয়)।
- একটা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পঘোষণাপত্র এই মর্মে, আপনি আর অন্য কোথাও থেকে লোন নিয়ে বাড়ির কাজ করছেন না।
- প্রকৌশল সনদপত্র।
- ভুমিকম্প প্রতিরোধ এর সনদ।
প্রতিষ্ঠান ভেদে এই কাগজ পত্র আরো কম বা বেশি হতে পারে।
যাই হোক, ফ্ল্যাট কেনার অথবা বানানোর জন্য লোন নিলে এত কাগজ পত্র দিতে হয় না। ফ্ল্যাট লোন নিতে যা যা লাগে-
- ডেভেলপার এবং ফ্ল্যাট ক্রেতার মধ্যে সম্পাদিত ফ্ল্যাট কেনার চুক্তি ( অবশ্যই সত্যায়িত ফটোকপি)।
- জমির মালিক এবং ডেভেলপার এর মধ্য বাড়ী বানানোর চুক্তিপত্রের সত্যায়িত
ফটোকপি।
- বাড়ির নকশার অনুমোদিত প্ল্যানের সত্যায়িত ফটোকপি।
- আবেদনকারীর ছবি,আবেদন ফি, আয়ের সার্টফিকেট এবং হোয়াইট পেপারে তিনটি স্যাম্পল সাইন।
- এছাড়াও ডেভেলপার কোম্পানির বিভিন্ন সনদ যেমন-সংঘস্মারক,সংঘবিধি এবং নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
আমরা একবারে আমাদের আজকের নিবন্ধন এর শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।
ইতিমধ্যে আপনারা হোম লোন কিভাবে পাবেন, কোথায় পাবেন, কত টাকা পাবেন
এবং কত টাকা সুদের বিনিময়ে আপনাকে এই লোন দেওয়া হবে, সব বিস্তারিত জেনে গেছেন।
একেবারে বিদায় নেওয়ার আগে আপনাকে আরো একটা ইনফো দিয়ে রাখি, আপনি যদি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী হোন,
তাহলে আপনার জন্য এই হোম লোন পাওয়ার ব্যবস্থা টি আরো ইফেক্টিভ এবং দ্রুত হবে।
কিন্তু আপনাকে শিউর হতে হবে, কোন রাস্ট্রবিরোধী অথবা রেস্ট্রিকটেড কাজে আপনি জড়িত নেই অথবা ছিলেন না।
তো এই পর্যন্তই আমাদের আজকের নিবন্ধন ‘বাড়ি নির্মানে ঋণ পাওয়ার খুব সহজ কিছু উপায়’।অপেক্ষায় রইলাম আপনার মুল্যবান মতামত জানার জন্য।
ই-কর্মাস ব্যবসা সর্ম্পকে জানতে এখানেই ক্লিক করুন
Leave a comment