ব্লগিং করতে নতুন ব্লগারদের ৮টি ভুল অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে
ব্লগিং কোন হঠাৎ করে সফল হওয়ার কাজ নয়। ব্লগিং করতে দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকতে হবে। এখান থেকে যেমন আজীবন আয় করার সুযোগ থাকে, তেমনি কাজ করার জন্যও আজীবন পরিকল্পনা রাখতে হবে। যা খুব দ্রুত আসে তার সমাপ্তি খুব দ্রুতই ঘটে। এজন্য আপনি যদি দীর্ঘদিন সফলতা ধরে রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে দীর্ঘ পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। আজকে আমরা এমন ৮টা ভুল নিয়ে আলোচনা করব। যেভুলগুলো সাধারণত নতুন ব্লগার রাগ করে থাকেন।
যাদের ব্লগিং করে অর্থ উপার্জনের ইচ্ছা রয়েছে। আপনারা অবশ্যই এই আটটি ভুল করবেন না। আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগিংয়ের পেশায় জড়িত আছে। মন থেকে ভালো লাগে বলেই আমি ব্লগিং করে থাকি। বর্তমানে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে খুব ভালই সাড়া পাচ্ছি। এবং অনলাইন থেকে উপার্জন করার জন্য একটি প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। চলুন আমরা একে একে জেনে নিই। কোন আটটি ভুল আমাদেরকে সবসময় এড়িয়ে চলতে হবে।
ব্লগিং এ প্রথম থেকে ইনকাম করার চিন্তা বাদ দিতে হবে:
কোন কাজেই একদিনে সফলতা আসেনা। আপনি যদি একটা গাছ লাগান, সেই গাছের ফল কিন্তু একদিনে আশা করতে পারবেন না। গাছ থেকে ফল পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন গাছের পরিচর্যা করে যেতে হবে। তাহলে একসময় গাছ থেকে ফল পেতে শুরু করবেন।
আপনি একটা চাকরির কথা চিন্তা করুণ। আপনাকে চাকরিতে জয়েন করার সাথে সাথে বেতন দেওয়া হয়না। আগে চাকরি করে মাস পরিপূর্ণ করতে হবে, তাহলে আপনাকে বেতন দেওয়া হবে। আর যদি পুরো মাস ঠিক মতো কাজ না করে অবহেলা করে থাকেন, তাহলে হয় চাকরি হারাতে হবে। না হয় বেতন কেটে ফেলা হবে।
ব্লগিংও ঠিক একই বিষয়। এখানেও আপনাকে এমন বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। যাতে কোন বৈশিষ্ট্য লংঘন না হয়। এবং একদিনে আয় করার চিন্তা বাদ দিতে হবে। যারা ব্লগিং শুরু করেন তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে কনটেন্ট তৈরিতে মনোযোগ দিতে হয়। কোয়ালিটি কনটেন্ট অবশ্যই ব্লগিং এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন ব্লগিংয়ের কাজ শুরু করেছিলাম প্রথম দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র কনটেন্ট রাইটিং এবং মার্কেটিং শিখে গেছিলাম। একটি ওয়েবসাইট দাঁড় করানোর জন্য শুধুমাত্র কন্টেন লিখলেই হবে না। কনটেন্ট মার্কেটিং ও আপনাকে শিখতে হবে।
শুরুতে আমাকে এই বিষয়গুলো শিখার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছিল। বর্তমান সময়ে এগুলো আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয়। আপনি জানবেন না তা আপনার জন্য সব সময় জটিল হয়ে থাকবে। যখন আপনি কোন একটা বিষয় জেনে যাবেন তখন উক্ত বিষয়টি আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। এজন্য প্রথমদিকে তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে ইনকাম করার চিন্তা বাদ দিতে হবে। তাহলেই নিশ্চিত আপনি ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সফলতা পাবেন।
ব্লগিংয়ে একাধিক অ্যাফিলিয়েট কোম্পানির সাথে কাজ করবেন না:
ব্লগিং করতে এসে নতুন ব্লগারদের জন্য এটা একটা সহজ ভুল। এটা বেশি ব্লগাররা করে থাকেন, বেশি আয় করার ভাবনা নিয়ে। আপনি যখন একাধিক অ্যাফিলিয়েট কোম্পানির সাথে কাজ করতে যাবেন, তখন আপনার লক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায়। ব্লগারদের জন্য আমার কাছ থেকে এটা একটা পরামর্শ আপনার একাধিক কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং না করে শুধু আপনার ব্লগের বিষয়ের সাথে মিল আছে। এমন একটি বা দুইটি কোম্পানির সাথে মার্কেটিংয়ের কাজ করুন।
মনে করুন, আপনার ওয়েবসাইটটা হচ্ছে টেকনোলজি রিলেটেড। এক্ষেত্রে আপনি এমন পণ্যগুলোর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন। যে পণ্যগুলো আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক ক্রয় করার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন। যদি আপনার ওয়েবসাইটে টেকনোলজি রিলেটেড হয়ে থাকে, তাহলে আপনার ওয়েবসাইটে যারা ভিজিট করবেন তারা অবশ্যই টেকনোলজি ভালোবাসে বলেই আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন। এক্ষেত্রে যদি আপনি বিভিন্ন গেজেট ও টেকনোলজি রিলেটেড প্রডাক্ট রিভিউ করেন। অথবা এদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেন, তাহলে এখান থেকে খুব ভালো পরিমাণে অ্যাপলেট কমিশন জেনারেট করা সম্ভব।
কন্টেন্ট ছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আবেদন করা:
নতুনদের জন্য এটাও একটা মারাত্মক ভুল কাজ। এমন কাজটি করতে গিয়ে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের একাউন্ট গ্রহণ করার পরিবর্তে। এরা আপনাকে কালো লিস্টে যুক্ত করে দেয়। আপনার ওয়েবসাইটে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে কন্টেন্ট না থাকে, তাহলে আপনার অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট মার্কেটিংয়ের জন্য অনুমোদন দিবেনা।
একটু আগে বলেছিলাম আমার ইতিহাস। আমি যখন ব্লগিং শুরু করেছিলাম, তখন দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে কোন পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়নি। এবং নিয়মিত কনটেন্ট লিখে গেছিলাম এবং কিভাবে কনটেন্টগুলোর মার্কেটিং করতে হয় তা শিখে গেলাম। দীর্ঘ এক বছর পরে আমি ধীরে ধীরে এই বিষয়ে নিজেকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে এবং এখান থেকে ভালো পরিমাণের ইনকাম তৈরি করতে পেরেছি।
এক্ষেত্রে আমি নিজেও এই ভুলগুলো করেছিলাম যে, ওয়েবসাইটে কোন কিছু না লিখেই অর্থাৎ কোয়ালিটি এনসিওর না করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন করতাম। আমি আবেদন করতাম ঠিকই কিন্তু আমার আবেদনগুলো গ্রহণ করা হতো হবে। পরবর্তীতে আমি এই বিষয়গুলো বুঝতে সক্ষম হই। এখন যখনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য আবেদন করি আমার প্রতিটি রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা হয়। কারণ, এখন আমি বুঝে গেছি কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আবেদন করতে হয়।
অ্যাফিলিয়েট লিংক নিয়ে স্পামিং করা যাবেনা:
বেশি আয় করার ভাবনা নিয়ে কখনও অ্যাফিলিয়েট লিংকটি দিয়ে সরাসরি একাধিক জায়গায় শেয়ার করা যাবেনা। ফেসবুক ও অন্য কোন ওয়েবসাইটের কমেন্টে অ্যাফিলিয়েট লিংকটি দেওয়া যাবে না। এটা করলে আপনার একাউন্ট ডিজেবল হতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে, যেন কোন রকম স্পামিং কাজ না হয়।
যারা নতুন এই বিষয়ে কাজ করেন তারা মনে করেন বিভিন্ন জায়গায় লিঙ্কটি ব্যবহার করলেই অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে কমিশন জেনারেট করা সম্ভব। যেহেতু বর্তমান টেকনোলজি আগের চেয়ে উন্নত এবং কোম্পানিগুলো বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট টুল ব্যবহার করে থাকে। তাই প্রতিটি কোম্পানি বুঝতে পারেন কোনরকমের স্পামিং করলে তারা তাদের অ্যাকাউন্টগুলো ডিজিটাল করে দেয়। যদি আপনার অ্যাকাউন্ট গুলো আপনি সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বৈশিষ্ট্য লঙ্গন করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
ব্লগিং এ সরাসরি পেইড প্রমোশন করা যাবেনা:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই কোম্পানির কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। নিয়ম কখনও লংঘন করা যাবেনা। অনেকেই আছে অ্যাফিলিয়েট লিংকটি ফেসবুক ও গুগল অ্যাডের মাধ্যমে প্রমোশন চালিয়ে থাকে। এটা করতে গেলেই আপনার একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। এটা কোন প্রতিষ্ঠান পছন্দ করবেনা। তাই সরাসরি পেইড প্রমোশন করা থেকে বিরত থাকুন।
ব্লগ ভিজিটরদের এনালাইস করুণ:
নিয়মিত ভিজিটরদের ডাটা সংরক্ষণ করুণ এবং যাচাই করুণ। কোন প্রকারের ভিজিটরদের সংখ্যা বেশি। আপনার ভিজিটরদের চাহিদা যাচাই করুণ, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কন্টেন্ট লিখতে চেষ্টা করুণ। ভিজিটর ধরে রাখার জন্য তাদের পছন্দের কন্টেন্টগুলো নিয়মিত প্রকাশ করতে পারেন। যখন তারা আপনার সাইটে তাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য খুঁজে পাবে, তখন তারা আপনার সাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে থাকবে।
একাধিক ব্যানার অ্যাড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন:
সাইটে একাধিক ব্যানার অ্যাড ব্যবহার করলে ট্রাফিক আপনার সাইটের কন্টেন্ট পড়ার সময় বিরক্ত হতে পারে। গুগলের নিয়ম অনুযায়ী একটা পেইজে ৩টির বেশি ব্যানার অ্যাড ব্যবহার করা যাবেনা। যদি ৩টির বেশি ব্যানার অ্যাড ব্যবহার করেন, তাহলে এটাও একটা বৈশিষ্ট্য লংঘন করা হবে।
আপনার লিখা কনটেন্টগুলোর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে প্রতিটা পেইজে গুগল বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি ৩০০ শব্দ পরপর একটা করে গুগল বিজ্ঞাপন আপনি সেট করতে পারেন।
ব্লগিং এ ভিজিটরদের কমেন্ট থেকে শিক্ষা নিন:
শিখতে কোন বাধা নেই। যেকোনো বিষয় না জানলে ছোট বা বড় যে কারো কাছ থেকে শিখতে পারেন। আপনার ভিজিটর কি কি কমেন্ট করছে তা নিয়মিত পড়ুন ।এবং এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুণ। তারা কোন পরামর্শ দিলে তাও সুন্দর ভাষায় গ্রহণ করুণ।
আশা করছি এই আটটি নিয়ম আপনাকে ব্লগিং ক্যারিয়ারে খুব দ্রুত সফলতা পেতে সাহায্য করবে। আজকের আর্টিকেল পড়ার পর আপনাদের পরামর্শ গুলো কেমন লেগেছে? কমেন্টসের মাধ্যমে তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের কমেন্টগুলো আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।