1 min read

আমার অধ্যাপক বাবার গল্প : ২য় পর্ব

(আমার অধ্যাপক বাবার গল্প : ৩য় এবং সমাপ্ত। পর্বটি অতি শীগ্রই আসবে। প্রথম পর্বটি পড়ুন এখানে)

বাবার দিকে আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম। বাবা ততক্ষণে কপি শেষ করছেন।

আমি কপির কাপটা নিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে ভাবতেছি, গ্রাম থেকে গিয়ে আব্বু ঢাকা শহরে কিভাবে ছিলেন?

ছোট দাদু মানে আব্বুর চাচ্চুর ততদিনে তো সংসার থাকার কথা। এসব মাথায় নিয়ে কিচেনে কাপটি রেখে এসে আব্বুকে জিজ্ঞেসও করে ফেললাম।

বাবা তোমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নিটা কেমন ছিল? গ্রাম থেকে গিয়ে, হঠাৎ অচেনা অজানা ঢাকা শহরের দিনগুলো কেমন ছিল?

বাবা: খুব একটা বেশি কষ্ট হয়নি। দাদিকে খুব মনে পড়তো, চাচাজির সাথে চিঠি আদান-প্রদান হতো।

কিছু দিন চাচাজির ছাত্রদের সাথে ব্যাচেলর বাসায় ছিলাম। চাচাজির ছাত্ররা আবার আমার স্কুলের বড় ভাই। অনেক স্নেহ করতেন।

আমি খুবই কোমল প্রকৃতির ছিলাম। আমার মনে নেই, কখনো দুষ্টুমি করছি কিনা। বাসায় বড় ভাইয়েরা কখনো কোনো কাজ করতে দিতেন না।

নিজের গুলো নিজে করতাম। এই যে, নিজের ব্যবহারের জিনিস, কাপড়চোপড়, বইখাতা এসব গুছিয়ে রাখা এটাই ছিল কাজ।

এভাবে কিছু বুঝে উঠার আগে ১ম বর্ষ শেষ হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ আমি ডিপার্টমেন্টে ১ম হই।

তারপর আমার ডিপার্টমেন্টের সব শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। একজন ম্যাম এর সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।

ম্যাম আমাকে একটা লজিং ঠিক করে দেন। ২ জনকে পড়াতে হবে। ১ জন ক্লাস টেন (১০ম শ্রেণি) আর একজন ক্লাস সেভেন (৭ম শ্রেণি)।

ওদের টানা ৪ বছর পড়াইছি। মার্স্টাস শেষ করা অব্দি ওদের বাসায় খেতাম, থাকতাম।

পরে চট্টগ্রাম চলে আসি। অনেক জায়গায় দরখাস্ত করি চাকরির জন্য। বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে জয়েনও করেছি, পরে আবার চলে আসি।

গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর ২ বছরের বেশি সসময় ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। কখনো মাথায় চাকরি আসে, কখনো আসে চাকরি।

চাচাজির সাথে বসে একদিন সিদ্ধান্ত নিই, চাকরিই করবো, তবে শিক্ষকতা। পরে চাকরির খোঁজ নিচ্ছিলাম। তখন এরকম সহজ ছিল না। এখনো হাতের নাগালে সব নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি পাওয়া যায়।

কয়েক মাস পর ঢাকায় একটি কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করি। সেখানে টানা ২ বছর চাকরি করি।

ওখান থেকে পরে চট্টগ্রাম চলে আসি। চট্টগ্রাম এসে কলেজে কয়েক বছর পর সহকারী অধ্যাপক পদে উত্তির্ন হয়।

তুমি যেদিন আল্লাহর কাছ থেকে এসেছ, সেদিন আমি আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার পদে যোগদান করি।

আমার জন্ম আর বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান এর খুশিতে, বাবাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম:

আচ্ছা বাবা, আম্মুর সাথে আপনার যুগল জীবনে পদার্পণের পেছনে কোনো গল্প আছে? নাকি গল্প ছাড়াই সামনে চলা?

এটা বলতেই বাবা কেমন জানি একটি রহস্যময় কাঁশি দিলো।আর মা ভেতর থেকে ডাক দিলো।

মীম… ও মীম… মীম… এতক্ষণ বাবার সাথে গল্প করলে পড়তে বসবা কখন, মা? যাও পড়তে বসো।

প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করাটা পড়াশোনার পাশাপাশি অতিরিক্ত একটা বিষয়। এটার জন্য পড়াশোনার ক্ষতি করা যাবে না মামনি।

মায়ের কথা শুনে একটি মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলাম পড়ার রুমে।

এটা আমি সিউর যে, বাবার মূখটা বন্ধ করার জন্য মানে বাবা মায়ের গল্পটা হাইড করার জন্য মা এই উপদেশটা দিয়েছেন।

নিশ্চয় বাবা মায়ের এক সাথে আবদ্ধ (যুগল জীবন) হওয়ার পেছনে একটি রহস্যময় রোমান্টিক গল্প আছে।

একদম পড়াই মন বসছে না। যতক্ষণ না জানতে পারি ততক্ষণ পড়াই মন বসবেও না। আমাকে জানতে হবে। আমি জানবো।

মনের ভেতর বিষয়টা জানার প্রবল ইচ্ছেটা পূরণ করতে না পারা, আমার জন্য অনেক যন্ত্রণার বটে। কোনোভাবে সুযোগ হচ্ছে না।

বলে রাখি এখানে, আমার বাবা ২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। একটাতে স্থায়ীভাবে, অন্যটিকে গেস্ট হিসেবে ক্লাস নেন।

তো বাবা সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় এসে যতটুকু সময় পান পড়েন। বাবা আজো ভিষণ পড়াশোনা করেন।

কয়েকমাস পর মামা-মামিরা আসছেন আমাদের বাসায়। সেই উপলক্ষ্যে একটি ফ্যামিলি ট্যুর এর আয়োজন করা হয়। সবাই মিলে রাঙ্গামাটি একদিনের ছোট ট্যুর দিই।

গাড়ীতে মামা-মামি, আর আব্বু আম্মুর রসিকতাগুলো রেখে আরো স্পষ্ট যে, আব্বু আম্মুর একটা সুন্দর গল্প আছে।

আরো কয়েকমাস পর জানতে পারলাম, আব্বুর সেই ক্লাস টেন (১০ম শ্রেণি) এর ছাত্রীটা আজকে আমার মা।

(আমার অধ্যাপক বাবার গল্প : ৩য় এবং সমাপ্ত। পর্বটি অতি শীগ্রই আসবে। পড়ার অনুরোধ রইল)

One thought on “আমার অধ্যাপক বাবার গল্প : ২য় পর্ব

  1. জানি না গল্প নাকি সত্যি। তবে অনেক সুন্দর ও ইমোশনাল। আপনার বাবার প্রতি আমার অনেক অনেক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসা।

    ১ম পর্বটি আরো বেশি ইমোশনাল ছিল। শেষ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *