1 min read

আছর থেকে মাগরিব: আমাদের করণীয়-কানেতা খানম।

আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন, অপমানিত করলে সহ্য করুন। প্রতারণা করলে মন খারাপ করে সময় নষ্ট করা যাবে না। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিলে অপেক্ষা করুন মাগরিবের জন্য।

আমাদের পুরো জীবনটা হলো “আছর থেকে মাগরিব ”  পর্যন্ত যে সময়, ঠিক সেই সময়টার মতো। 

যদি পৃথিবীতে আমরা ৫০/৬০/৭০ বছর বা তারও বেশি বেঁচে থাকি। আখিরাতের তুলনায় এই সময়টা একেবারেই নগন্য।   

হাদিসে এসেছে, এই দুনিয়ার সময়টা “আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, সময়টা যত ছোট, দুনিয়ার জীবনটাও তত ছোট”

একটা বিষয়, সেখান থেকেও আমরা কেউ কেউ ২০/২৫/৩০ বছর বা তারও বেশি অতিক্রম করে ফেলছি। 

একটু সময় নিয়ে গভীর চিন্তা করে দেখুন তো আমাদের হাতে আর কতটুকু সময় আছে? 

অথচ আমরা এই সময় নিয়ে কতই না চিন্তা করি!!! আগামী ৫ বছরে আমি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবো, আমাকে পৌঁছাতেই হবে। 

৩০ বছরের আগে আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে।  আমাকে দেশে এবং দেশের বাহিরে ব্যবসাী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই হবে। 

আবার আমরা কখনো কখনো আমাদের চেয়ে মান-মর্যাদা, আর্থিক অবস্থা যাদের একটু নিচে তাদের সাথে অনেক সময় বন্ধুত্ব করতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। 

শহরে আছি বড় হয়েছি বলেই, গ্রামের কোনো বন্ধুকে মেনে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। সহজে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। 

অথচ আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন,  খুব অল্প সময়ের জন্য। সাথে একটিমাত্র কাজ দিয়েছেন, তাহলো তার ইবাদত করা।

ইবাদত যার যত বেশি হবে, তার পুরুষ্কার তত বড় হবে।

আর সময়টা কতক্ষণ?  সময়টা হলো: মাত্র আছর থেকে মাগরিব। এই সময়ের সঠিক ব্যবহারের উপর আমাদের পুরুষ্কার আর তিরস্কার নির্ভর করছে। 

একটা উদাহরণ দিই , আমরা যখন ২ ঘণ্টা সময় এক্সাম পিরিয়ডে থাকি, তখন আমরা কি করি? আমাদের লক্ষ্য কি থাকে? 

নিশ্চয়ই সবগুলো প্রশ্নের শুধু উত্তর লিখা না, ভালো করে লিখা। উদ্দেশ্য থাকে গোল্ডেন এ+ পাওয়ার। লক্ষ্য থাকে সারা দেশের সেরাদের সেরা হওয়ার, তাই না? এই সময়কে আপনি কতটুকু গুরুত্ব দেন?  ভাবুন তে। 

একটি গল্প বলি, একজন পথিক সুগন্ধা ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে যাত্রা বিরতি দিল কিছুক্ষণের জন্য।  

সে পথিক, একটা গাছের নিচে আশ্রয় নিল, তারপর সেখানে ফ্যান লাগালো, একটা খাট বসালো, রোদ না পড়ার জন্য সামিয়ানা টাঙালো । ততক্ষণে ট্রেনের  হুইশেল বেজে উঠলো। 

হুইশেল বাজার সাথে সাথে থাকে সব ছেড়ে ট্রেনে উঠতে হলো।

আচ্ছা এই পথিকের ব্যাপারে আপনি কি মন্তব্য করবেন? নিশ্চয়ই ভালো কিছু না। 

আমরা রুহের জগৎ হতে জান্নাতে যাচ্ছি। আমরা অর্ধকের বেশি পথ ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছি। এখন রুহের জগৎ হতে পৃথিবীতে আসছি। পৃথিবীর সময়টা হলো আমাদের জন্য যাত্রা বিরতি মাত্র।

যাত্রা বিরতিতে আমাদের কেউ কেউ কিছু সমস্যায় পড়ি। যেমনঃ অনেকে বসার সিট পাই না আবার অনেকে আরামে বসে থাকেন কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থেকে সময়টা পার করেন। অনেক সময় পান করার পানিও পায় না, আবার অনেকে দামী দামী পাণীয় পান করেন।

এসব নিয়ে কি আমরা কারো সাথে ঝগড়া করি? মারামারি করি? কাউকে খুন করি? না করি না। এমন কি কেউ যদি এমন করেন ও আমরা তাদেরকে নষ্ট মনমানসিকতার মানুষ বলে ধারণা করি।

এই যাত্রা বিরতিতে আপনাকে কেউ কষ্ট দিলেও কি আসে যায়? এখানে আপনার মনের মত করে সময়টা পার করতে না পারলেও কি আসে যায়? এখানে আপনি পছন্দের কোনো একটা জিনিস নিতে না পারলেও কি আসে যায়?

অথবা কেউ এখানে আরামে সময় পার করলেও কি আহামরি অর্জন হলো? এখানো কেউ যা চেয়েছে সব পেয়েছেন, এতেও তার কতটুকু লাভ হলো? ট্রেনের হুইশেল বেজে উঠলে তো সব ফেলে চলে যেতে হবে।

আরেকটা উদাহরণ দিই, মনে করুন আপনি কোনো একটি বড় কোম্পানিতে কাজ করছেন, যেখানে কয়েক লাখ কর্মচারি কাজ করছেন।

একদিন আপনাদের বস সবাইকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।

বিশাল এক মাঠে নিয়ে গেল, যেখানে আগে থেকেই ছোট ছোট হিরার টুকরো আর পাথরের টুকরো দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল।

এবার বস ঘোষণা করলেন এই মাঠে হিরা আর পাথরের টুকরো আছে, সবাই পাথরগুলো কুড়াবে, হিরা নয়। সময়টা হলো আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।

তিনি এটাও ঘোষণা করলেন যে, এখানে থেকে যারা যতবেশি পাথর কুড়িয়ে আনতে পারবে, তাদের হিরার তৈরি ঘর উপহার দেওয়া হবে।

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো যে, বস কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন না। পুরুষ্কারের ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই।

সময় শেষে, অনেকে পাথর নিয়ে হাজির অনেকে আবার হিরা কণা নিয়ে বসের সামনে আসতে লজ্জাও পাচ্ছেন।

যারা পাথর এনেছে তারা ঠিক প্রতিশ্রুতি মত পুরুষ্কার পেয়েছেন। যারা হিরা কণা নিয়ে এসেছেন, হিরাও শেষ পাথর ও শেষ সময়ও শেষ। তাদের অবস্থা কেমন হবে?

পরিশেষে, আমরা যেন আমাদের দুনিয়ার অল্প সময়টা কাজে লাগেতে পারি।

এখানে কেউ আপনাকে ভালো বললেও কিছুই যায় আসে না খারাপ বললেও কিছু যায় আসে না। কেউ ছোট করলেও কিছু যায় আসে না, বড় বললেও যায় আসে না।

আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন, অপমানিত করলে সহ্য করুন, প্রতারণা করলে মন খারাপ করে সময় নষ্ট করা যাবে না, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিলে অপেক্ষা করুন মাগরিবের জন্য।

2 thoughts on “আছর থেকে মাগরিব: আমাদের করণীয়-কানেতা খানম।

  1. আমাদের চিন্তা উদ্রেককারী একটি লেখা এটি। এমন ভাবে আমাদের জীবনটা নিয়ে ভাবা জরুরি।

    সময়টা খুবই ছোট। কিন্তু আমরা যেভাবে দুনিয়ার মোহে পড়ে দুনিয়ার পিছনে ছুটছি তাতে ভয় হয় আমরা যদি ঐলোকগুলোর মতো হয়ে যাই, যারা হিরা নিয়ে বসের সামনে উপস্থিত হয়েছে এবং সবকিছু হারিয়েছে।

    আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।

    1. আসসালামু আলাইকুম…. আতিকুর রহমান আপনাকে ধন্যবাদ। সত্যিই আমাদের জীনটা অনেক ছোট, কিন্তু অনেক দামী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *